নিউজনেস্ট

মিনার থেকে মিম্বার: গাজার প্রতিরোধে মসজিদের ভূমিকা

মিনার থেকে মিম্বার: গাজার প্রতিরোধে মসজিদের ভূমিকা
মিনার থেকে মিম্বার: গাজার প্রতিরোধে মসজিদের ভূমি। ছবি: আল জাজিরা

গাজায় প্রতিরোধের শক্তি গড়ে ওঠার পেছনে একটি গভীর আধ্যাত্মিক ও আদর্শিক ভিত্তি রয়েছে, যা মসজিদগুলোর ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। প্রায় শত বছর ধরে এই প্রতিরোধ আন্দোলন ঐতিহ্যগতভাবেই ইসলামের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। গাজার মসজিদ ও ধর্মীয় নেতারা এই আন্দোলনকে চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে আসছে।

মিম্বার থেকে শুরু হওয়া পথচলা

‘মিম্বারের পাশ থেকে আমাদের পথচলা শুরু হয়’ একটি উক্তি। এটি   ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগঠন হামাসের আদর্শিক ভিত্তি ও আধ্যাত্মিক প্রেরণার এক কথায় প্রকাশ। ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই আন্দোলন ফিলিস্তিনে তাদের শক্তির বিস্তার ঘটিয়েছে এবং প্রতিরোধের ধারাবাহিকতা রক্ষায় মসজিদগুলোকে কেন্দ্র করে তাদের অগ্রযাত্রা চালিয়ে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন: ইসরায়েলের যে দখলদারিত্বের কথা বিশ্বের অজানা

কাসসামের উত্তরাধিকার ও ইয়াসিনের মিম্বর

প্রতিরোধের ইতিহাসে শেকড়ের কথা উঠলেই যার নাম এসেই যায়, তিনি হলেন, ইজ্জুদ্দিন আল কাসসাম। ১৯২০ এর দশকে তিনি গভীর ধর্মীয় শিক্ষা ও ইসলামী আদর্শের প্রতি আনুগত্যকে ভিত্তি করে একটি প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। তাঁর বক্তৃতা মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যেত এবং মনের ওপর গভীর প্রভাব ফেলত, যা সহজেই আবেগকে জাগ্রত করে প্রতিরোধে প্রেরণা জোগাতো।

ইজ্জুদ্দিন আল কাসসাম কর্মজীবনে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষকে যুক্ত করেছিলেন। বক্তৃতা, ধর্মীয় শিক্ষা এবং বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজের মাধ্যমে তিনি ইসলামের মূল্যবোধ ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর শাহাদাত প্রতিরোধ আন্দোলনে আত্মত্যাগের গুরুত্ব ও পরিচয়কে আরও শক্তিশালী করে তোলে।

গাজার মসজিদসমূহ: বিজয় ও সম্মানের মঞ্চ

২০০৯ সালে হামাস ‘গাজার মসজিদসমূহ: বিজয় ও সম্মান’ নামে একটি সম্মেলনের আয়োজন করে। এটি পরিচালিত হয় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শহিদ ইসমাইল হানিয়ার পৃষ্ঠপোষকতায় এবং ইখওয়ানুল মুসলিমিনের প্রয়াত নেতা মুহাম্মদ মাহদি আকিফের তত্ত্বাবধানে। এতে অংশ নেন ধর্মীয় ব্যাক্তিত্ব, মনোবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা। এই সম্মেলনের মাধ্যমে গাজার মসজিদগুলোর ভূমিকা নির্ধারণ করা হয় এবং প্রতিরোধ আন্দোলনে মসজিদগুলোর কেন্দ্রীয় ভূমিকাকে নির্দেশনামূলক নথির মাধ্যমে আরও সুদৃঢ় করা হয়।

মসজিদগুলোর ওপর হামলা: প্রতিরোধে আঘাতের প্রচেষ্টা

গাজার মসজিদগুলো প্রতিরোধের প্রতীক। এগুলো মানুষকে প্রেরণা জোগানোর কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। তাই মসজিদগুলোর উপর দখলদার ইসরাইলি বাহিনী উপর্যুপরি হামলা চালিয়েছে। এখন পর্যন্ত গাজার প্রায় ৯০% মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছে এবং মসজিদের ইমামদের বিশেষভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

এটি ইসরাইলি বাহিনীর একটি ষড়যন্ত্র, যার মাধ্যমে গাজার ঈমান ও প্রতিরোধের ধারাবাহিকতাকে নষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এরপরও এই মসজিদগুলোই গাজায় প্রতিরোধের জীবনীশক্তি। গাজার জনগণকে কুরআন ও ইসলামের আদর্শের সঙ্গে এই মসজিদগুলোই ঐক্যবদ্ধ করে রেখেছে।

গাজায় প্রতিরোধ আন্দোলনের সঙ্গে মসজিদগুলোর এই সম্পর্ক অনেক গভীর এবং ঐতিহাসিক। প্রতিটি মিনার, প্রতিটি মিম্বার গাজার প্রতিরোধে নবযুগের যোদ্ধা তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

আতাউল্লাহ আয়মান
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত