নিউজনেস্ট

কোরআনে বর্ণিত মুমিনের গুণাবলি

কোরআনে বর্ণিত মুমিনের গুণাবলি
কোরআনে বর্ণিত সুরা মুমিনুন। ছবি: সংগৃহীত

মুমিনদের গুণাবলি কোরআন মাজিদে একাধিক জায়গায় বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা মুমিনদের হৃদয়গর্ভিত আচার-আচরণ, নৈতিকতা এবং জীবনযাপনের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। মুমিনদের গুণাবলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু নিম্নরূপ:

১. আল্লাহভীতি ও আনুগত্য

মুমিনগণ আল্লাহকে সর্বাধিক ভয় করেন। তারা আল্লাহর আদেশ পালন এবং নিষেধ এড়িয়ে চলেন। একই সাথে তারা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশনাও যথাযথভাবে মেনে চলেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মুমিনগণ এমন যে, তাদের সামনে আল্লাহর নাম উচ্চারিত হলে তাদের অন্তর কেঁপে ওঠে এবং যখন তাদের সামনে তাঁর আয়াতগুলো তেলাওয়াত করা হয়, তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়।’ (সুরা আনফাল: ২-৩)

২. নামাজ ও দানশীলতা

মুমিনগণ নামাজের প্রতি অত্যন্ত যত্নশীল হয়ে থাকেন। পাশাপাশি তারা আল্লাহর দেওয়া সম্পদ থেকে অসহায়দের জন্য ব্যয় করেন। আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের গুণ বর্ণনা করে বলেন, ‘যারা নামাজ কায়েম করে এবং আমি তাদের যা দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে।’ (সুরা বাকারা: ৩)

৩. ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখা

মুমিনগণ অন্যকে ভালো কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করেন এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখেন। তারা প্রকাশ্যে ও গোপনে নামাজ কায়েম করেন এবং যথাযথভাবে জাকাত আদায় করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মুমিন পুরুষ ও নারীরা পরষ্পরে অভিভাবক। তারা সৎকাজের নির্দেশ দেয় এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সুরা তাওবা: ৭১)

৪. অনুতপ্ত হওয়া ও তাওবা করা

মুমিনগণ তাদের ভুল-ত্রুটির জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে বারবার তওবা করেন। তারা আল্লাহর নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করেন না এবং সব রকম ইবাদাতে সচেষ্ট থাকেন। আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের গুণ বর্ণনা করে বলেন, ‘যারা তওবাকারী, ইবাদতকারী, প্রশংসাকারী, রুকু ও সেজদাকারী এবং সৎকাজের আদেশকারী ও অসৎ কাজ থেকে বিরতকারী।’ (সুরা তাওবা: ১১২)

৫. অনর্থক কথাবার্তা এড়িয়ে চলা

মুমিনগণ অনর্থক কাজ ও কথা এড়িয়ে চলেন। তারা নিজেদের প্রবৃত্তি এবং দেহ ও মনকে হারাম কাজ থেকে রক্ষা করেন। আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের গুণ বর্ণনা করে বলেন, ‘যারা অনর্থক কথাবার্তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং যারা তাদের লজ্জাস্থান হেফাজত করে।’ (সুরা মুমিনুন: ৩-৫)

৬. গায়েবের প্রতি বিশ্বাস

মুমিনগণ গায়েবের প্রতি বিশ্বাস রাখেন। যেমন: আল্লাহ, ফেরেশতা, পরকাল এবং পূর্ববর্তী নবিদের প্রতি বিশ্বাস। আল্লাহ তায়ালা সুরা বাকারায় মুমিনদের গুণ বর্ণনা করে বলেন, ‘যারা অদৃশ্যের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, নামাজ কায়েম করে এবং তাদের জন্য আমরা যা দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে।’ (সুরা বাকারা: ৩)

৭. দুনিয়ার মোহ ত্যাগ

মুমিনগণ দুনিয়ার বিলাসিতায় নিজেকে জড়ান না। তারা আল্লাহর আনুগত্যে মনোনিবেশ করেন এবং পরকালের কল্যাণ অর্জনের জন্য চেষ্টা করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা বাণিজ্য ও বেচাকেনায় ব্যস্ত হয়েও আল্লাহর জিকর, নামাজ কায়েম এবং জাকাত প্রদানে অবহেলা করে না।’ (সুরা নুর: ৩৭)

৮. ধৈর্য ও নম্রতা

মুমিনগণ ধৈর্য ধারণ করেন এবং নম্র আচরণের মাধ্যমে মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। পাশাপাশি তারা দাওয়াতের ক্ষেত্রে ধৈর্যশীল এবং কল্যাণকামী হন। আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের গুণ বর্ণনায় বলেন, ‘তারা ধৈর্যের পরামর্শ দেয় এবং রহমতের পরামর্শ দেয়।’ (সুরা বালাদ: ১৭)

৯. আত্মশুদ্ধি

মুমিনগণ অহংকার ও আত্মপ্রশংসা থেকে বিরত থাকেন। তারা নিজেদের পাপমুক্ত রাখতে সদা সচেষ্ট থাকেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা নিজেদের প্রশংসা করো না। আল্লাহই ভালো জানেন, কে বেশি তাকওয়া অবলম্বনকারী।’ (সুরা নাজম: ৩২)

১০. সামাজিক দায়িত্ব পালন

মুমিনগণ গরিব, এতিম এবং অভাবীদের প্রতি দায়িত্বশীল হয়ে থাকেন। তারা মানুষের প্রয়োজন মেটানোর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারা মানত পূরণ করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মিসকিন, এতিম ও বন্দিকে খাবার খাওয়ায়।’ (সুরা দাহর: ৭-৮)

মুমিনদের পুরস্কার

আল্লাহ তাআলা মুমিনদের জন্য জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘তারাই হবে উত্তরাধিকারী, যারা জান্নাতুল ফিরদাওস লাভ করবে এবং সেখানে চিরকাল থাকবে।’ (সুরা মুমিনুন: ১০-১১)

মুমিনদের গুণাবলি কেবল তাদের আখেরাতের সফলতা নিশ্চিত করে না; বরং তাদের দুনিয়াতেও সম্মানিত করে। তাই আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের এই গুণগুলো আমাদের জীবনের মূলমন্ত্র হওয়া উচিত।

ইসলাম ডেস্ক
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত