নিউজনেস্ট

পর্দা: নারীর মর্যাদা, সুরক্ষা ও শালীনতার প্রতীক

পর্দা: নারীর মর্যাদা, সুরক্ষা ও শালীনতার প্রতীক
পর্দা: নারীর মর্যাদা, সুরক্ষা ও শালীনতার প্রতীক। ছবি: নিউজনেস্ট

আমাদের দীন ইসলামে নারীর মর্যাদা ও সুরক্ষার জন্য বিশেষ কিছু বিধান রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো হিজাব। আল্লাহ তাআলা হিজাব প্রবর্তন করেছেন নারীর সম্মান ও আব্রু রক্ষার জন্য। আল্লাহ তাআলা বলেন:

يٰٓاَيُّهَا النَّبِىُّ قُلْ لِاَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ الْمُؤْمِنِيْنَ يُدْنِيْنَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيْبِهِنَّۚ ذٰلِكَ اَدْنٰٓى اَنْ يُّعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ ۗ وَكَانَ اللّٰهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا

অর্থ: হে নবি! আপনি আপনার স্ত্রী-কন্যাগণ এবং মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন নিজেদের ওপর তাদের চাদরের অংশ ঝুলিয়ে দেয়। এটি তাদের না চেনার জন্য উত্তম, যাতে তারা হয়রানির শিকার না হয়। আল্লাহ ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু। (সুরা আহজাব: ৫৯)

এই আয়াতে হিজাবের মূল উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। আর তা হলো, নারীর শালীনতা ও সততার মাধ্যমে তার পরিচয় নিশ্চিত করা এবং তাকে হয়রানির হাত থেকে সুরক্ষিত রাখা। হিজাব শুধু পোশাক নয়, এটি নারীর আত্মমর্যাদা, শালীনতা এবং পবিত্রতার প্রতীক।

পর্দার বিধান প্রবর্তনের ইতিহাস

প্রথম ধাপ

৫ম হিজরিতে হিজাবের প্রথম নির্দেশনা আসে। নবি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিয়ের একটি ঘটনার মাধ্যমে এটি প্রবর্তিত হয়। তিনি যখন উম্মুল মুমিনিন জাইনাব বিনতে জাহাশ রাজিআল্লাহু আনহুকে বিয়ে করেন তখন সাহাবিগণ তাঁর বাসায় আমন্ত্রিত হয়ে খাবার শেষে দীর্ঘ সময় কথা বলছিলেন। এতে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অস্বস্তি অনুভব করেন। তখন আল্লাহ তাআলা হুকুম দেন:

وَاِذَا سَاَلْتُمُوْهُنَّ مَتَاعًا فَسْـَٔلُوْهُنَّ مِنْ وَّرَآءِ حِجَابٍۭ ذٰلِكُمْ اَطْهَرُ لِقُلُوْبِكُمْ وَقُلُوْبِهِنَّ ۭ وَمَا كَانَ لَكُمْ اَنْ تُؤْذُوْا رَسُوْلَ اللّٰهِ وَلَآ اَنْ تَنْكِحُوْٓا اَزْوَاجَهٗ مِنْۢ بَعْدِهٖٓ اَبَدًا ۭ اِنَّ ذٰلِكُمْ كَانَ عِنْدَ اللّٰهِ عَظِيْمًا

অর্থ: যদি তোমরা নবি-স্ত্রীদের কাছে কিছু চাও তবে পর্দার আড়াল থেকে চাও। এটি তোমাদের অন্তর এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিক পবিত্র। (সুরা আহজাব: ৫৩)

দ্বিতীয় ধাপ

এর পরের বছর হিজাবের পূর্ণাঙ্গ বিধান আসে। বর্ণিত আছে, হজরত ওমর রাজিআল্লাহু আনহু একাধিকবার নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পরামর্শ দেন, যেন নবি-স্ত্রীদের জন্য একটি বিশেষ পর্দার ব্যবস্থা করা হয়। একদিন উম্মুল মুমিনিন সাওদা বিনতে জামআ রাজিআল্লাহু আনহা বাইরে বের হলে ওমর রাজিআল্লাহু আনহু তাকে চিনে ফেলেন। তখন তিনি মন্তব্য করেন, সাওদা! আমরা তোমাকে চিনে ফেলেছি। এর পরেই আল্লাহ তাআলা নারীদের জন্য পর্দার বিধান দেন। পরবর্তীতে যা মুসলিম নারীদের জন্য বাধ্যতামূলক হয়ে যায়।

শরয়ি পর্দার পরিচয়

শরিয়তের দৃষ্টিতে হিজাব এমন পোশাক, যা নারীর শরীর সম্পূর্ণ আবৃত রাখে এবং তার সৌন্দর্যকে গোপন রাখে।

১. পুরো শরীর ঢেকে রাখতে হবে
২. পোশাক স্বচ্ছ ও আঁটসাঁট হওয়া যাবে না
৩. সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে না
৪. পোশাক হবে সাধারণ, নজরকাড়া নয়
৫. পুরুষদের পোশাকের অনুকরণ করা যাবে না
৬. অমুসলিম নারীদের পোশাকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়া যাবে না
৭. লোক দেখানোর উদ্দেশে পরিধান করা যাবে না

হিজাবের উদ্দেশ্য ও উপকারিতা

হিজাব নারীর সুরক্ষা ও মর্যাদার প্রতীক। এটি শুধুমাত্র পোশাক নয়, বরং আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও ঈমানের বহিঃপ্রকাশ।

১. আল্লাহর আনুগত্য: হিজাব আল্লাহর নির্দেশ পালনের মাধ্যম
২. ঈমানের পরিচায়ক: এটি নারীর ঈমানের প্রতীক
৩. সুরক্ষার প্রতীক: হিজাব নারীদের শয়তানের প্ররোচনা ও অন্যায় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সুরক্ষা দেয়
৪. শালীনতা বজায়: এটি নারীর লজ্জাশীলতা ও পবিত্রতা রক্ষা করে
৫. সমাজে ভারসাম্য রক্ষা: এটি পুরুষ ও নারীর মধ্যে পবিত্র সম্পর্ক বজায় রাখে

হিজাব আবশ্যক হওয়ার সময়কাল

নারীর বয়ঃসন্ধিকালে হিজাব পরিধান বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। তবে শারীরিক পরিবর্তন আগে দেখা দিলে তখন থেকেই তাকে হিজাবের শিক্ষা দেওয়া উচিত। এটি নারীর ধর্মীয় এবং সামাজিক উভয় দায়িত্বেরই অংশ।

হিজাব ইসলামে নারীর মর্যাদা, সুরক্ষা এবং আত্মমর্যাদার প্রতীক। এটি চাপিয়ে দেওয়া কোন বিধান নয়, বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি উপহার। হিজাব নারীর শালীনতা, পবিত্রতা এবং আত্মসম্মান বৃদ্ধির মাধ্যম। নারীগণ আল্লাহর এই বিধান আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করলে সমাজে কোন অশ্লীলতা থাকবে না। পাশাপাশি সমাজে বিরাট পরিবর্তন আসবে। এটি একজন নারীর জন্য একটি সৌন্দর্যমণ্ডিত জীবনধারা এবং ঈমানের প্রতীক।

ইসলাম ডেস্ক
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত