নিউজনেস্ট

থার্টিফার্স্ট নাইট: উৎসবের নামে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের শিক্ষাকে অবজ্ঞা

থার্টিফার্স্ট নাইট: উৎসবের নামে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের শিক্ষাকে অবজ্ঞা
থার্টিফার্স্ট নাইট: উৎসবের নামে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের শিক্ষাকে অবজ্ঞা। ছবি: নিউজনেস্ট

১২টা বেজে ৩৪ মিনিট। সম্মানিত খতিব মুহতারাম আব্দুল মালেক হাফিজাহুল্লাহ মসজিদে প্রবেশ করলেন। মিম্বারের পাশে টেবিলের সামনে রাখা চেয়ারে বসলেন। সবাইকে সালাম দিলেন, আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহ….

হামদ সানা পাঠ করলেন। হামদ-সানা শেষে প্রথমেই মুহতারাম রবের শুকরিয়া আদায় করেন। মুহতারাম বলেন, ‘হায়াত—মানুষের জীবন আল্লাহর বহুত বড় নেয়ামত। জিন্দেগির প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর নেয়ামত। এই যে আমরা বলি ‘সময়’-এই সময়টাই তো আসলে আমাদের জিন্দেগি। সময় পার হচ্ছে মানে আমাদের জিন্দেগিটা—যার যতটুকু সময় আল্লাহ তায়ালা বরাদ্দ করেছেন, আল্লাহ জানেন। আমরা কেউ জানি না—ওই সময়টা কমে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। আমার বয়স বাড়ছে মানেই আমার সময়টা কমে যাচ্ছে। ষাট বছর যদি আমার হায়াত হয়ে থাকে এই এক বছরে আরও এক বছর কমলো। ‌বয়স বাড়া মানে নির্ধারিত বয়সটা কমা।’

বয়স বাড়ার প্রকৃত অর্থ

বিষয়টি আরো খোলাসা করে মুহতারাম বলেন, ‘প্রতিটা মুহূর্ত নেয়ামত। সময় এমন এক নেয়ামত— ওটা কিভাবে যে পার হয়, আমি টের পাই না। আমার এই দেহটা মাথা থেকে পা পর্যন্ত; এখান থেকে যদি একটু কিছু কমে যায়, আমি টের পাই। একটা আঙ্গুলের একটা মাথা কাটা গেলে আমার কষ্ট হয় না? হয়। টের পাই। বুঝতে পারি যে, কিছু কমে গেছে। কিন্তু সময়টা এমন এক নেয়ামত, ওটা যে পার হয়ে যাচ্ছে, কমে যাচ্ছে— আমি টের পাই না।’

এরপর মুহতারাম বলেন, ‘অনেক দিন পরে যখন চিন্তা করি, আরে আমি তো বুড়ো হয়ে যাচ্ছি রে! কবে যে বুড়ো হয়ে গেলাম, টেরই পাই না। জিন্দেগির ১০ বছর পার হয়ে যায়,  মানুষ ও-ই হালতে বসে আছে। আগে যেমন ছিল, দশ বছর পরও সে স্বাভাবিক। যেমন ছিলাম তেমনই ত। ২০ বছর পার হয়ে যায় স্বাভাবিক। অনে..কদিন পর মানুষ একটু ভাবে যে, আমার তো দাড়ি সাদা হয়ে শুরু হয়েছে; তখন মনে হয় একটু পরিবর্তন যে, দাড়ি সাদা হয় শুরু হয়েছে। আচ্ছা, দাড়ি আমি সাদা দেখছি যখন, তখনই কি সাদা হয়েছে? সাদা হওয়ার দিকে যে যাচ্ছিল বেশ কয়েক বছর আগে থেকে! এক দুটো সাদা হলে তেমন একটা গুরুত্ব দেয় না। এরকম সাদা হয়ই তো! সবগুলো সাদা হয়ে গেলে তখন একটু আহারে মনে হয় যে, বয়স বেড়ে গেছে আমার! এটা কিন্তু মুমিনের শান না।’

জীবন পরিচালনায় মুমিনের শান

এরপর জিন্দেগির ক্ষেত্রে মুমিনের শান কেমন হওয়া উচিত—এ বিষয় গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, ‘মুমিনের শান হলো, যে জিনিসটা সাধারণত অনুভব করা হয় না যে, প্রতিটা মুহূর্তেই কিন্তু আমার জিন্দেগি এগুচ্ছে কবরের দিকে— এটা অনুভব করা হয় না। সেটা অনুভব করতে পারা, করতে অভ্যস্ত হওয়া— এটাই হলো মুমিনের শান, মুমিনের কাজ।’ মুহতারাম আরো বলেন, ‘অনেক পরে পরিবর্তন আসার পরে যদি আমি খবর পাই, টের পাই যে, একটা পরিবর্তন হয়েছে; তাহলে জিন্দেগিকে সুন্দরভাবে কাজে লাগাতে পারব না। অনেক পরে পরিবর্তনের পর যখন আমি টের পাচ্ছি, আমার আন্দাজ হচ্ছে, তখন কিছু করার থাকে না। এজন্য বড় পরিবর্তনের আগে এই বাস্তবতা উপলব্ধি করা যে, প্রতি মুহূর্তেই, প্রতিদিন, প্রতিরাতে আমি কবরের দিকে আগাচ্ছি—এই বাস্তবতা অনুধাবন করা, এটাই হল মুমিনের কাজ।’

এরপর মুহতারাম বলেন,  ‘যদি এই বাস্তবতা উপলব্ধি করতে না পারি তাহলে আমার হুঁশ হবে এমন এক সময়ে, যখন হুঁশ হওয়ার দ্বারা খুব বেশি আমি ফায়দা হাসিল করতে পারব না। আরবি একটা কবিতা আছে। আমাদের কওমি মাদ্রাসায় ওটা পাঠ্যপুস্তক দেওয়ানে আলি। তো ওই পুস্তিকায় ওখানে একটা আরবি শের আছে—

إلى ما تجر أذيال التصابي

و شيبك قد نضا برد الشباب‏

بلال الشيب في فوديك نادى

بأعلى الصوت حي على الذهاب‏

[কবিতার অনুবাদ—

তুমি শিশুদের মতো কতকাল পর্যন্ত চলবে?

তোমার সাদা চুল তাড়িয়ে দিয়েছে তারুণ্যের রেশ।

বয়সের চিহ্ন তোমাকে ডাকছে,

উচ্চকণ্ঠে বলছে, ‘যাও! এগিয়ে চলো!’]

এরপর সম্মানিত খতিব সাহেব কবিতার সাবলীল অর্থ এবং ব্যাখ্যা পেশ করেন। তিনি বলেন, ‘তুমি কতদিন আর বাচ্চা আচরণ করতে থাকবে? দেখো না, দাড়ি তো সাদা হচ্ছে। দাড়ি যদি মুন্ডায় তাহলে তো সাদা দাড়িও আর দেখে না। আল্লাহ তায়ালা দাড়ি সাদা করে দিয়ে আখেরাতের কথা, কবরের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। দাড়ি যদি মুন্ডিয়ে ফেলে তাহলে তো সেটাও তো শেষ।’ তিনি আরো বলেন, ‘তো কবি এ কথা বলছেন, তোমার বার্ধক্যের কিছু আলামত তোমার গায়ে। তুমি দেখছো না? তুমি বুঝতে পারছো না? এখনো টের পাচ্ছো না? তোমার যৌবন শেষ হয়ে গেছে তো! তোমার কানে তো সর্বক্ষণ আওয়াজ হচ্ছে যে, কবর এসে গেছে! আল্লাহ তায়ালা তোমাকে বার্ধক্যের বিভিন্ন আলামত দিয়ে সতর্ক করছেন যে, কবর এসে গেছে। তারপরেও তোমার হুঁশ হচ্ছে না! এজন্য আমাদের ইসলামের শিক্ষা হলো, প্রতিদিন, প্রতি সকাল, প্রতি সন্ধ্যা কবরকে স্মরণ করা।

থার্টিফার্স্ট নাইটের বাস্তবতা

এরপর মুহতারাম আলোচনা করেন নববর্ষ, থার্টিফার্স্ট নাইট নিয়ে। তিনি বলেন, ‘ইসলাম নববর্ষ পালন করতে বলে না। কী বলে? প্রতি সকাল পালন কর, প্রতি সন্ধ্যা পালন করো। এক বছর পরে যদি তুমি তোমার হিসাব লও— নববর্ষ পালন করার পেছনে যদি ভাল কোন যুক্তি থাকে, তো সেটা এটাই। পেছনের বছর কেমন কাটালাম, সেটার একটু হিসাব নিকাশ গ্রহণ করি। সামনের জন্য কিছু সুন্দর পরিকল্পনা করি, তো এটাই তো ভালো নিয়ত হতে পারে। নববর্ষ পালনে এর চেয়ে ভালো নিয়ত আর কিছু আছে? এটাই ভালো নিয়ত হতে পারে। তো, এরকম নিয়ত এক বছর পরে করলে আপনি কী তারাক্কী করবেন? কী উন্নতি করবেন আপনি? এই নিয়ত এক বছর পরে কেন? এই নিয়ত করবেন প্রতি সকাল, প্রতি সন্ধ্যায়!’  

ভবিষ্যতের অপেক্ষা

এরপর মুহতারাম উল্লেখ করেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন—

اذا اصبحت فلا تنتظروا المساء واذا امسيت فلا تنتظروا الصباح

তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হলে আর সকালের অপেক্ষা করো না এবং সকালে উপনীত হলে আর সন্ধ্যার অপেক্ষা করো না। [সহীহ বুখারি, হাদীস: ৬৪১৬]

অর্থাৎ, যখন তুমি সকালে উপনীত হবে, তখন এটা ভাববে না যে, আমি সন্ধ্যা পর্যন্ত জীবিত থাকব; আবার যখন তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হবে, তখন এটা ভাববে না যে, আমি সকাল পর্যন্ত জীবিত থাকব। হতে পারে আজকের সকালে তুমি উপনীত হয়েছ, তবে সন্ধ্যার আগেই তোমার সময় শেষ হয়ে যেতে পারে। আবার হতে পারে, তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হয়েছ, কিন্তু সকাল পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারবে না।’

নববর্ষ নয়; নবদিন, নবরাত

সময়ের মূল্যায়নের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে তিনি আরো বলেন, ‘ইসলাম আমাদের শেখায় প্রতিটি সময়ের মূল্যায়ন করতে। ইসলাম বলে—নবদিন, নবরাত। প্রতিটি দিন এবং রাতকে নতুন হিসেবে গণ্য করে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে। আরবি ভাষায় দিন এবং রাতের জন্য যে শব্দ ব্যবহৃত হয়, তা হলো ‘جديدا’। ‘জাদিদা’ শব্দটি দ্বিবচন, যার অর্থ নতুন। অর্থাৎ দিনও নতুন, রাতও নতুন। তাই দিনের সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এটি জীবনের জন্য একটি নতুন অধ্যায় এবং সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত আরেকটি নতুন অধ্যায়। বছর শেষে নয়, বরং প্রতিদিন, প্রতিসন্ধ্যায় এভাবে হিসাব-নিকাশ করা প্রয়োজন।’

২৪ ঘন্টার রুটিন

এরপর মুহতারাম বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য ২৪ ঘণ্টার একটি রুটিন নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তিনি আমাদের রাসুল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে শিখিয়েছেন, কীভাবে সময়কে কাজে লাগাতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথম যে দোয়া পড়তে হয়, তা হলো:

الحمد لله الذي احيانا بعد ما اماتنا واليه النشور

অর্থ: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য, যিনি আমাদের ঘুম নামক মৃত্যুর পর জীবিত করলেন এবং যার দিকে আমাদের প্রত্যাবর্তন হবে।

এখানে ঘুমকে মৃত্যু বলা হয়েছে। অর্থাৎ যখন আমরা ঘুমিয়ে যাই, তখন যেন মৃত্যুবরণ করি! এবং যখন জেগে উঠি, তখন জীবিত হই! এভাবে চলতে চলতে এক সময় আমাদের হায়াত শেষ হয়ে যাবে এবং আমরা আল্লাহর সামনে হাজির হব। প্রতিটি সময়ে আল্লাহর স্মরণে থাকার জন্য ইসলাম আমাদের বিশেষ দোয়া শিখিয়েছে:

اللهم بك اصبحنا وبك امسينا وبك نحيا وبك نموت واليك النشور

অর্থ: হে আল্লাহ! আমরা আপনার অনুগ্রহে সকালে উপনীত হয়েছি এবং আপনার অনুগ্রহেই সন্ধ্যায় উপনীত হব। আপনার অনুগ্রহেই আমরা জীবিত এবং আপনার কাছে আমাদের প্রত্যাবর্তন হবে।’

ইস্তেগফারের গুরুত্ব

এরপর ইস্তেগফারের প্রতি গুরুত্বারোপ করে সম্মানিত খতিব সাহেব বলেন, ‘প্রতিটি সময়ে ইবাদত ও ইস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করা ইসলামের শিক্ষা। বিশেষ করে শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া, কোরআন তিলাওয়াত করা, সিজদায় পড়ে থাকা এবং ইস্তেগফার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দোয়া হলো:

استغفر الله الذي لا اله الا هو الحي القيوم واتوب اليه

অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব, সৃষ্টির ধারক। আমি তাঁর কাছে তাওবা করি।

এভাবে সময়কে কাজে লাগিয়ে প্রতিটি দিন ও রাতের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে হবে। নববর্ষ পালন করা ইসলামের শিক্ষা নয়। বরং প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর ইবাদত ও তাঁর সন্তুষ্টির পথে চলার শিক্ষা ইসলামের মূল বার্তা।’

এরপর মুহতারাম বলেন, ‘রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দুটি রাস্তা দেখিয়েছেন—একটি সফলতার এবং আরেকটি ধ্বংসের। আল্লাহ তায়ালার নাফরমানি করলে তা ধ্বংসের রাস্তা; আর আল্লাহর বিধানের ওপর চললে তা সফলতার রাস্তা।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইসলাম আমাদের নববর্ষ পালন করতে শেখায় না। বরং জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে আল্লাহর পথে নিবেদিত করার শিক্ষা দেয়।’

অন্য সভ্যতা ধার করা

এরপরে সম্মানিত খতিব সাহেব খুব গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করেন, ‘তিন শ্রেণির মানুষের ওপর আল্লাহর লানত। এক শ্রেণি হলো যাদেরকে আল্লাহ ইসলামের নেয়ামত দান করেছেন। নবিজির মাধ্যমে শরিয়ত দান করেছেন, সুন্নত দান করেছেন। এমন উত্তম ও নির্মল আদর্শ পেয়েও তারা ডানে-বামে তাকায়! অন্য জাতি থেকে কালচার, সংস্কৃতি, সভ্যতা ধার নেয়। একজন মুসলিম হয়ে এটা কত বড় নাশুকরি (অকৃতজ্ঞতা)! আল্লাহ তোমাকে এত সুন্দর দীন দান করেছেন, নবিজির উত্তম আদর্শ সংরক্ষণ করে রেখেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সেটা কুরআনে দিয়েছেন, হাদিসে পেয়েছ, ওলামায়ে কেরামের মুখ থেকে শুনছ। অথচ সেটা গ্রহণ না করে তুমি বিভিন্ন জাতির বানানো সভ্যতা গ্রহণ করতে চাও! এটা আল্লাহর নেয়ামতের নাশুকরি। ইসলামের মতো নেয়ামত পেয়ে অন্যদের সভ্যতা-সংস্কৃতি ধার নেওয়া আল্লাহর লানতের কারণ।’

এরপর মুহতারাম সুরা ফুরকানের ৬২ নাম্বার আয়াত পাঠ করেন—

وَهُوَ الَّذِي جَعَلَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ خِلْفَةً لِمَنْ أَرَادَ أَنْ يَذَّكَّرَ أَوْ أَرَادَ شُكُورًا

আল্লাহ তায়ালা রাত আর দিন সৃষ্টি করেছেন। রাতের পর দিন, দিনের পর রাত আসতে থাকে। দিনের ১২ ঘণ্টা একরকম নয়। ভোরে একরকম, সূর্য ওঠার সময় আরেক রকম। এরপর দুপুর, আসরের দিকে বদলায়। সন্ধ্যা আসে, রাতের মধ্যেও বদল হয়। তারপর আবার সকাল আসে। আল্লাহ দিন-রাত এমনভাবে সাজিয়েছেন—এই বছর উদযাপন, থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনের জন্য নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

وَهُوَ الَّذِي جَعَلَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ خِلْفَةً لِمَنْ أَرَادَ أَنْ يَذَّكَّرَ أَوْ أَرَادَ شُكُورًا

অর্থ: তিনিই সেই সত্তা, যিনি রাত ও দিনকে পরস্পরের অনুগামী করে সৃষ্টি করেছেন (কিন্তু এসব বিষয় উপকারে আসে কেবল) সে ব্যক্তির জন্য, যে উপদেশ গ্রহণের ইচ্ছা রাখে কিংবা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে চায়।

আতশবাজি দিয়ে আল্লাহকে স্মরণ!

আয়াতের ব্যাখ্যায় মুহতারাম বলেন, ‘এটা আল্লাহকে স্মরণ করার জন্য, তাঁর শুকরিয়া আদায়ের জন্য। কিন্তু ১২টার পর আতশবাজির মাধ্যমে আল্লাহকে স্মরণ! আমরা কোথায় গিয়ে পৌঁছেছি? রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন? আবার নাম হলো থার্টি ফার্স্ট নাইট। বারোটার পর তারিখ বদলে যায়, ৩১ বলে কেন? এটা চিন্তা করতে পারেন! ইসলামে দিন-রাতের হিসাব আছে। ইফতার রাত ১২টার পর করেন? মাগরিবের নামাজ রাত ১২টার পর আদায় করেন? সূর্য ডোবার পর রাত শুরু হয়। ইসলামিক শিক্ষা অনুযায়ী, রাত সূর্য ডোবার পর শুরু হয়। এ জন্য চান্দ্রমাস শুরু হয় সন্ধ্যার পর। প্রথম তারাবি রোজার আগেই পড়েন। কারণ, চাঁদের হিসাব সূর্য ডোবার পর থেকেই। এজন্য নববর্ষ উদযাপন আমাদের সংস্কৃতি নয়।

আতশবাজির ক্ষতি

এরপর থার্টিফার্স্ট নাইট, নববর্ষ পালনের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে মুহতারাম বলেন— ‘প্রথমত, এটা আমাদের সংস্কৃতি নয়। দ্বিতীয়ত, আতশবাজি করা—ঢাকার এবং দেশের কী অবস্থা হয়? বাসা, হাসপাতালের রোগীরা কষ্ট পায়। শিশু আতশবাজির শব্দে ভয় পায়। এক শিশু মারা গেছে এমন ঘটনাও আছে। মানুষ হাসপাতালে যায়। পত্রিকায় রিপোর্ট আসে। তারপরও হুঁশ না হলে কখন হবে? এটা অনর্থক, অহেতুক, অযৌক্তিক। মানুষের জন্য ক্ষতিকর। ইসলামের সৌন্দর্য হলো—অহেতুক বিষয় থেকে বেঁচে থাকা। ইসলামি হুকুমত হলে সরকার মানুষের ফায়দা ও জরুরত অনুযায়ী কাজ করবে। মুখ চায় ভাজাপোড়া, কিন্তু গ্যাস্ট্রিক হয়। ডাক্তারের পরামর্শ না মানলে ক্ষতি হয়। আমাদের মুখ চায় একরকম আর আমাদের পাকস্থলী সে চায় আরেকরকম। তো, ডাক্তাররা আমাদেরকে পরামর্শ দেয় যে, আপনি এটা খাবেন না, ভাজাপোড়া বেশি খাবেন না। এখন আমার জিহ্বা একদিকে, আর ডাক্তারের পরামর্শ আরেকদিকে। তো আপনি কোনটা চান?’

সরকারের দায়িত্ব

এরপরে সরকারের দায়িত্বের প্রতি ইঙ্গিত করে সম্মানিত খতিব মাওলানা আবদুল মালেক সাহেব বলেন, ‘কিন্তু দায়িত্বশীল যারা তারা যদি ইসলামি শিক্ষা, নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ ধারণ করতে পারে, তাহলে জনগণকে পরিচালিত করবে সেই বিষয়ের ওপর, যার ওপর জনগণের ফায়দা এবং লাভ রয়েছে। যেটাতে জনগণের দুনিয়াবি এবং আখেরাতের সফলতা রয়েছে— সেই অনুযায়ী জনগণকে পরিচালিত করবে। আর যদি ইসলামিক শিক্ষা, নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ সম্পর্কে তাদের জানা না থাকে তাহলে তারা বলবে, জনগণ কোনটা চায় সেটা কর।’ 

মুহতারাম আরো বলেন, ‘যদি এই সরকার চিন্তা করে— দেশের ক্ষতি, জনগণের ক্ষতি, প্রত্যেক শ্রেণীর মানুষের ক্ষতি— এখন যখন জনগণ যা চায় তখন শুধু তার চাওয়ার ওপরই দিয়ে দিবে? এটা তো আইনত নিষিদ্ধ করা দরকার! থার্টিফার্স্ট নাইট এটা আইনগতভাবে নিষিদ্ধ হওয়া দরকার।’

এরপর মুহতারাম বলেন, ‘জনগণের মন মতো কত কিছু চায়। যদি সব মনমতো করতে দাও, তাহলে সরকারের দরকার কী? সরকারের দরকার হলো যেটাতে জনগণের ফায়দা, তার ওপর পরিচালিত করা। এটা হল সরকারের নিয়ম-নীতি। আমরা তো মনে করি জুলাই আগস্টের আন্দোলনের পর যে সরকার গঠিত হয়েছে, সে সরকার এমন হবে না। সে সরকার হবে যেটাতে জনগণের ফায়দা, মানুষের ফায়দা, জনগণের ফায়দা—সেভাবে পরিচালিত করবে। সেই ফায়দা কোত্থেকে পাবে বলেন? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সিরাত থেকে পাবে। আল্লাহ তায়ালা সেই তৌফিক দান করেন।’

পরিশেষে মুহতারাম বলেন, ব্যস, আজকের কথা এটাই— আমরা প্রতি সকাল, প্রতি সন্ধ্যায় নিজের হিসেব নিব। আমলের হিসেব নিব। প্রতি সকালে চিন্তা করব, সেই দিনটা যেন আল্লাহর হুকুম মোতাবেক চলে, আল্লাহর বান্দাদের প্রতি কোনো প্রকারের জুলুম যাতে আমার কারণে না হয়ে যায়, আমার কারণে কারো হক যেন নষ্ট না হয়ে যায়। ইনশাআল্লাহ আমাদের জিন্দেগী সুন্দর হবে।’

وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين

টিম নিউজনেস্ট
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত