নিউজনেস্ট

বাংলাদেশে পাঁচ লাখ অবৈধ বিদেশির অবস্থান, সবচেয়ে বেশি ভারতীয় নাগরিক

বাংলাদেশে পাঁচ লাখ অবৈধ বিদেশির অবস্থান, সবচেয়ে বেশি ভারতীয় নাগরিক
বাংলাদেশে পাঁচ লাখ অবৈধ বিদেশির অবস্থান, সবচেয়ে বেশি ভারতীয় নাগরিক। ছবি : সংগৃহীত

ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও প্রায় পাঁচ লাখ বিদেশি নাগরিক এখনো বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। সরকারের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, অবৈধভাবে বসবাসরত এসব বিদেশির মধ্যে ভারতীয় নাগরিকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এমনকি এদের মধ্যে অনেকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন। ফলে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার ১১ সদস্যের একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে অবস্থানরত অবৈধ বিদেশিদের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে বৈধ হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই সময়সীমার পরও যারা বৈধ হননি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।

গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে অবস্থান করা অনেক বিদেশি মাদক ব্যবসা, ব্যাংকের এটিএম বুথে জালিয়াতি, জাল মুদ্রার কারবার, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা, সোনা চোরাচালান, অনলাইন ক্যাসিনো ও মানবপাচারের মতো অপরাধে যুক্ত। এমনকি কেউ কেউ চাকরির মাধ্যমে আয় করা অর্থ কর ফাঁকি দিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করছেন।

সরকারের কাছে এক লাখ ২০ হাজার বিদেশি নাগরিকের তথ্য থাকলেও প্রকৃত সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ বলে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে ভারতীয় নাগরিকের সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি।

সরকারি প্রতিবেদন অনুসারে, ১৬৯টি দেশের নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে রয়েছেন। এর মধ্যে ভারতের পাশাপাশি চীন, পাকিস্তান, কানাডা, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, রাশিয়ার নাগরিকদের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে।

এ ছাড়া নাইজেরিয়া, ক্যামেরুন, মালি, কঙ্গো, তানজানিয়া, ঘানা, গিনি, উগান্ডা, ইথিওপিয়া, অ্যাঙ্গোলা, পেরু, আলজেরিয়া, ইউক্রেন ও থাইল্যান্ডের নাগরিকরাও অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে আসা অনেক বিদেশি ভ্রমণ, ব্যবসা, শিক্ষার্থী, খেলোয়াড় কিংবা অন অ্যারাইভাল ভিসায় প্রবেশ করেন। পরে তারা দেশে থেকে যান এবং বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। তবে তাদের সঠিক তথ্য সংরক্ষণের জন্য সরকারি কোনো সমন্বিত তথ্যভাণ্ডার নেই, ফলে তাদের চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়ছে।

এছাড়া কারা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে ৪৭২ জন বিদেশি নাগরিক বিভিন্ন অপরাধে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভারতীয়, এরপর মিয়ানমার ও পাকিস্তানের নাগরিক। নাইজেরিয়া, উগান্ডা ও ঘানার নাগরিকরাও এর তালিকায় রয়েছেন।

তথ্যে আরও বলা হয়, অনেক সময় আটক বিদেশিদের কাছে কোনো পাসপোর্ট পাওয়া যায় না। অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের পাসপোর্ট গোপন করেন বা ফেলে দেন। এতে তাদের নাগরিকত্ব যাচাই কঠিন হয়ে পড়ে। আবার যেসব দেশের দূতাবাস বাংলাদেশে নেই, সেসব দেশের নাগরিকদের পরিচয় নিশ্চিত করাও সময়সাপেক্ষ হয়ে দাঁড়ায়।

সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, অবৈধ বিদেশিদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হলেও অনেকেই মামলা করে দীর্ঘদিন বাংলাদেশে থেকে যান। দেশে কোনো ডিটেনশন সেন্টার না থাকায় তাদের রাখা নিয়েও সমস্যা তৈরি হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বৈধ ও অবৈধ কতজন বিদেশি রয়েছেন, সে বিষয়ে হালনাগাদ সঠিক তথ্য নেই। তবে এটি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ২ লাখ ২০ হাজারের মতো বিদেশির তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও অন্তত এক লাখ বিদেশি অবৈধভাবে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ সরকার অবৈধ বিদেশিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে সতর্কতামূলক বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে এবং বিদেশিদের তালিকা তৈরি করছে। পাশাপাশি যারা অবৈধভাবে অবস্থান করছেন, তাদের শনাক্ত করে দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

সরকারের উদ্যোগের পরও অবৈধ বিদেশিদের সংখ্যা কেন এত বেশি, তারা কীভাবে এখানে অবস্থান করছে, এবং কীভাবে এই সমস্যা আরও ভালোভাবে সমাধান করা যায়—এই প্রশ্নগুলোর উত্তর এখনো স্পষ্ট নয়। তবে টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

নিউজনেস্ট ডেস্ক
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত