রাজধানীর গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের জমি দখল ও দলিল জালিয়াতি নিয়ে নতুন করে তদন্ত শুরু হয়েছে। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের গঠিত উচ্চপর্যায়ের কমিটি জমির বরাদ্দ প্রক্রিয়া, দখলের ইতিহাস এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভূমিকা খতিয়ে দেখছে। তদন্তের প্রাথমিক তথ্য বলছে, ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে জমিটি আওয়ামী লীগের দখলে যায় এবং পরবর্তীতে দলটির শীর্ষ নেত্রী শেখ হাসিনার নামে দলিল সম্পন্ন করা হয়।
জমির প্রকৃত ইতিহাস
নথিপত্র অনুযায়ী, গুলিস্তানের ‘২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ’ ঠিকানার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ জমির প্রকৃত মালিক ছিলেন এক পাকিস্তানি ব্যবসায়ী। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি দেশ ছাড়েন এবং আর ফিরে আসেননি। পরে সরকার জমিটি ‘অনিবাসী সম্পদ’ হিসেবে ঘোষণা করে এবং এটি গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতায় নিয়ে আসে।
১৯৮১ সাল থেকে আওয়ামী লীগ ভবনটি দখলে নিয়ে দলীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করতে থাকে। ১৯৯৭ সালে প্রথমবার জমিটি বরাদ্দের জন্য দলটির পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়। তবে বরাদ্দের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি।
যেভাবে আওয়ামী লীগের দখলে যায় জমিটি
গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তদন্ত অনুযায়ী, ২০১২ সালের ১২ জুন ভূমি মন্ত্রণালয় জমিটি শেখ হাসিনার নামে বন্দোবস্ত অনুমোদন করে। এরপর ঢাকার তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. মহিবুল হক দ্রুত জমির রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেন। দলিলের নম্বর ১৯৯১/২০১২। দলিল অনুযায়ী, ২১১১ সাল পর্যন্ত জমির মালিকানার মেয়াদ বহাল থাকবে।
কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তাদের দাবি, ভূমি মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারবহির্ভূতভাবে এ জমির বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে, যা আইনগতভাবে অবৈধ। এ কারণে জমির দলিলটি ‘ভুয়া’ হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে এবং বাতিলের সুপারিশ করা হতে পারে।
তদন্তে যাদের নাম এসেছে
জমি বরাদ্দ ও দলিল প্রক্রিয়ায় যাদের নাম উঠে এসেছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন—
আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্র ও গণপূর্তমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সাবেক ভূমিমন্ত্রী মো. রেজাউল করিম হীরা, ঢাকার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, ঢাকার তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. মহিবুল হক।
গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, তদন্ত শেষ হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
সরকারি জমি দখল ও দলিল জালিয়াতির এই ঘটনা নিয়ে ইতোমধ্যেই ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি প্রমাণিত হয় যে দলিল অবৈধভাবে করা হয়েছে, তাহলে সরকার এটি বাতিল করতে পারে।