নিউজনেস্ট

বাংলাদেশ হয়ে ’চিকেন নেক’-এ যাওয়ার রেল প্রকল্প স্থগিত: নিজের পায়েই কুড়াল মারল ভারত?

বাংলাদেশ হয়ে ’চিকেন নেক’-এ যাওয়ার রেল প্রকল্প স্থগিত: নিজের পায়েই কুড়াল মারল ভারত?
বাংলাদেশ হয়ে ’চিকেন নেক’-এ যাওয়ার রেল প্রকল্প স্থগিত: নিজের পায়েই কুড়াল মারল ভারত? ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সংযোগ জোরদারের উদ্যোগে যখন নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছিল, ঠিক তখনই ভারতের আকস্মিক সিদ্ধান্তে থমকে দাঁড়াল বাংলাদেশ হয়ে সেভেন সিস্টার্সে যাওয়ার রেল প্রকল্প। প্রায় পাঁচ হাজার কোটি রুপির অর্থায়ন ও নির্মাণকাজ স্থগিত করে নয়াদিল্লি বলছে, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা কারণে তাদের এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে আসলে ভারতেরই কৌশলগত ক্ষতি হয়েছে—তারা নিজেদের পায়ে নিজেই কুড়াল মারল।

যে পথে আসছিল লাভ, সেই পথেই হোঁচট

বাংলাদেশ হয়ে ভারতীয় রেল সংযোগের পরিকল্পনা শুধু অবকাঠামো উন্নয়ন ছিল না, এর পেছনে ছিল বিশাল অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক সম্ভাবনা। ‘চিকেন নেক’ করিডরের ওপর চাপ কমিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে বিকল্প রুটে যুক্ত করার রূপরেখা তৈরি করেছিল ভারত। এর ফলে তাদের ত্রিপুরা, আসাম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ডসহ সাতটি রাজ্য উপকৃত হতো। কিন্তু এখন সেই পরিকল্পনা ভেস্তে গেল।

বিশ্লেষকদের মতে, প্রকল্প স্থগিত করে ভারত তাদেরই কৌশলগত সুবিধা বিসর্জন দিল। সীমিত করিডর, পাহাড়ি অঞ্চল আর প্রতিবেশী দেশগুলোর সীমিত রেল অবকাঠামো দিয়ে এত বড় জনসংখ্যা ও অর্থনীতিকে টানতে গেলে চ্যালেঞ্জ আরও বাড়বে।

বাংলাদেশ যা দিচ্ছিল, তা তারা আর কোথাও পাবে না

বাংলাদেশ ভারতের জন্য ছিল সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত, কার্যকর ও অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক রুট। ২০ কোটি মানুষের দেশটি শুধু ভৌগোলিক সুবিধাই নয়, স্থিতিশীল বাণিজ্যিক পরিবেশ, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও আঞ্চলিক সংযোগে আন্তরিক অংশীদার হিসেবেই কাজ করছিল।

বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি, বিদ্যমান রেলপথ এবং সমুদ্রবন্দর—বিশেষ করে মোংলা বন্দর—ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য এক অমূল্য সম্পদ হতে পারত। এখন সে সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার পথে।

বিকল্প রুটে শুধু সমস্যা

নেপাল ও ভুটানের মধ্য দিয়ে রেল সংযোগের যে পরিকল্পনা ভারত করছে, তা আদৌ টেকসই নয় বলেই ধারণা অনেকের। পাহাড়ি ভূখণ্ড, অবকাঠামোগত দুর্বলতা ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা—সব মিলিয়ে এই রুট লজিস্টিক্যালি জটিল ও ব্যয়বহুল। এমনকি রেল নির্মাণ শেষ হলেও তা কার্যকরভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা করাই হবে বড় চ্যালেঞ্জ।

উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে রেললাইন বাড়ানোর পরিকল্পনাও শুধুই অভ্যন্তরীণ। এর মাধ্যমে সীমান্ত পেরোনো বাণিজ্য বা আঞ্চলিক সংযোগের কোনো সুবিধা পাওয়া যাবে না। এককথায়, ভারতের জন্য এটি হবে কেবল ‘তেল মেখে ঘরেই বসে থাকা’।

কে হারাল, কে পেল?

প্রকল্প স্থগিতের ঘোষণার পর অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, বাংলাদেশ কি আসলে কিছু হারিয়েছে? নাকি ভারতই নিজের ক্ষতির পথ বেছে নিয়েছে?

বাংলাদেশে এখনও নানা দেশ বড় বড় অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগে আগ্রহী। চীন, জাপান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের সড়ক, রেল ও বন্দর প্রকল্পে কাজ করছে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের বিকল্প অংশীদার আছে। কিন্তু ভারতের জন্য বাংলাদেশ ছিল একমাত্র টেকসই ও লাভজনক রেলপথ অংশীদার।

একপেশে সিদ্ধান্ত, দ্বিপক্ষীয় আঘাত

এই প্রকল্প বাতিল শুধু রেল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা নয়, এক ধরনের রাজনৈতিক বার্তাও। কিন্তু এই বার্তায় কার ক্ষতি হলো—বাংলাদেশের, নাকি ভারতের? বর্তমান বাস্তবতায় বলা যায়, নয়াদিল্লির এই একপেশে সিদ্ধান্ত স্বল্পমেয়াদে হয়তো একটি বার্তা দিলেও, দীর্ঘমেয়াদে তাদেরই ক্ষতির খাতায় লেখা থাকবে।

নিউজনেস্ট ডেস্ক
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত