নিউজনেস্ট

বন্দি মুক্তির দাবিতে গর্জে উঠছে ইসরায়েল, জোরালো হচ্ছে আগ্রাসন বন্ধের দাবি

বন্দি মুক্তির দাবিতে গর্জে উঠছে ইসরায়েল, জোরালো হচ্ছে আগ্রাসন বন্দের দাবি
বন্দি মুক্তির দাবিতে গর্জে উঠছে ইসরায়েল, জোরালো হচ্ছে আগ্রাসন বন্দের দাবি। ছবি: সংগৃহীত

গাজায় চলমান আগ্রাসন বন্ধ করে ফিলিস্তিনের হাতে আটক ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্ত করার দাবি দিন দিন জোরালো হয়ে উঠছে। শুধু মানবাধিকার কর্মী কিংবা যুদ্ধবিরোধীরা নন, এবার এই দাবিতে সরব হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক, সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ও রিজার্ভ সেনারা।

গতকাল সোমবার ১৪ই এপ্রিল সন্ধ্যা পর্যন্ত ইসরায়েলের প্রায় সাড়ে সাত হাজার নাগরিক একযোগে বিভিন্ন পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন, যেগুলোর মূল বক্তব্য—‘যুদ্ধ নয়, আগে বন্দিমুক্তি।’ তাদের মতে, এখনকার যুদ্ধ রাজনৈতিক ও ব্যক্তিক স্বার্থে পরিচালিত হচ্ছে। এটা ইসরায়েলের কোন নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে না; বরং বন্দিদের জীবন ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

শিক্ষকদের কণ্ঠে স্পষ্ট আহ্বান

দখলদার ইসরায়েলের খ্যাতনামা পত্রিকা হারেৎজ জানায়, দেশটির প্রায় ৩,৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যুদ্ধবিরোধী এক বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন। তারা ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর রিজার্ভ সেনাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে লিখেছেন, ‘আমরা চাই অপহৃতদের দেরি না করে ঘরে ফিরিয়ে আনা হোক, এমনকি যদি এর জন্য যুদ্ধ বন্ধ করতে হয়, তবুও!’

তাদের ভাষায়, ‘এই যুদ্ধ এখন আর রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য নয়; বরং ক্ষমতাসীন রাজনীতিকদের স্বার্থ রক্ষার মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এর পরিণতিতে নিরপরাধ মানুষ, সেনা ও বন্দিদের প্রাণ যাচ্ছে এবং রিজার্ভ বাহিনী ক্লান্ত হয়ে পড়ছে।’

নিউজনেস্ট

তারা স্মরণ করিয়ে দেন, অতীতেও কেবল আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমেই বন্দি মুক্তির পথ খুলেছে। অপরদিকে প্রায় ৩ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকাও আলাদা এক বিবৃতিতে যুদ্ধ থামানোর দাবি জানিয়েছেন। তারা পরিষ্কার বলেছেন, ‘এটা সামরিক দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার কথা নয়, এটা মানবজীবন রক্ষার আহ্বান।’

তাদের মতে, রাজনৈতিক সমঝোতাই এখন একমাত্র পথ। যত দেরি হবে, ততই বন্দিদের জীবন আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। অভিভাবকদের বার্তা: ‘আমরা আমাদের সন্তানদের যুদ্ধ নয়, শান্তি শেখাতে চাই।’

একই সুরে কথা বলছেন অভিভাবকরাও। অন্তত এক হাজার অভিভাবক এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা সন্তানদের চিরস্থায়ী যুদ্ধের মধ্যে মানুষ করতে রাজি নই। শিশুদের হত্যাকাণ্ড দেখে চোখ বুঁজে থাকব না। গাজায় কোন নির্দোষ মানুষ নেই—এই ভয়ংকর ধারণাকে আমরা ঘৃণা করি।’

তারা আরও বলেন, ‘আমরা অপহৃতদের ভাগ্যকে উপেক্ষা করতে পারি না। আমরা মানবতা থেকে সরে দাঁড়াতে রাজি নই।’

সাবেক জেনারেল ও রিজার্ভ সেনাদের একাত্মতা

এই দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাক ও সাবেক সেনাপ্রধান দান হালুটস। তারা ট্যাংক বাহিনীর ১৫২৫ সদস্যের সঙ্গে এক হয়ে যুদ্ধ থামিয়ে বন্দি মুক্তির দাবি জানিয়ে স্বাক্ষর করেছেন।

এছাড়া প্যারাট্রুপার ও পদাতিক বাহিনীর ১৬০০ জন সাবেক সদস্য, সামরিক গোয়েন্দা ইউনিট ‘তালপিয়ট’-এর ১৭০ জন সাবেক, ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর ১০০০ জন রিজার্ভ ও সাবেক কর্মকর্তা, ১৫০ জন নৌবাহিনীর সাবেক অফিসার, সামরিক চিকিৎসক এবং গোপন গোয়েন্দা ইউনিট ৮২০০-এর শত শত সদস্যও একই দাবিতে পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন।

তারা বলেন, ‘বন্দিদের মুক্তির জন্য এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। এটি আমাদের মূল্যবোধের প্রশ্ন।’

নেতানিয়াহুর সরকার ক্ষুব্ধ, হুমকি বরখাস্তের

তবে এই শান্তিপ্রস্তাবকে ভালোভাবে নেয়নি নেতানিয়াহুর সরকার। প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রীরা এই পিটিশনগুলোকে ‘বিদ্রোহ’ ও ‘সেনাবাহিনীতে অবাধ্যতা’ বলে আখ্যা দিয়ে সই করা ব্যক্তিদের বরখাস্তের হুমকি দিয়েছেন। তাদের মতে, এই দাবি শত্রুদের মনোবলকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত