স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের কাছে উপবাস একটি জনপ্রিয় পন্থা, যা ওজন কমানো, প্রদাহ হ্রাস এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এই খাদ্যাভ্যাসটি স্বাস্থ্যগত অনেক সুবিধার দিকে ঝুঁকে থাকে। তবে সম্প্রতি একটি গবেষণা এমন একটি অপ্রত্যাশিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেরিয়ে এনেছে যা চুলের বৃদ্ধি প্রক্রিয়ার ওপর প্রভাব ফেলে।
গবেষণায় কী বলা হয়েছে?
চীনের ওয়েস্টলেক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী বিং চ্যাং এবং তার দল উপবাস বা ডায়েট কন্ট্রোলের একটি বিশেষ দিক খুঁজে বের করতে গবেষণা করেন। তারা ইঁদুর ও মানবদেহের ওপর এই ডায়েটের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করেন। ফলাফল এই দাঁড়ায় যে, এটি চুলের বৃদ্ধির গতি ধীর করে দিতে পারে এবং ঘনত্ব কমিয়ে ফেলতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যখন ইঁদুরকে নির্দিষ্ট সময়ে খাবার না দেওয়া হয় এবং তারা উপবাসের নিয়মে চলে, তখন তাদের চুলের বৃদ্ধির হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। ইঁদুরদের চুলের ফলিকল স্টেম সেলগুলোর ওপর এই উপবাসের প্রভাব এতটাই প্রবল যে, চুলের বৃদ্ধি প্রক্রিয়া ধীর হতে থাকে।
ডায়েট কন্ট্রোল কীভাবে ক্ষতি করে?
উপবাস শরীরকে শর্করা না দিয়ে চর্বি থেকে শক্তি উৎপাদনে বাধ্য করে। এই পরিবর্তনটি শরীরে ফ্যাটি অ্যাসিডের নিঃসরণ ঘটায়, যা চুলের ফলিকল স্টেম সেলগুলোর ক্ষতি করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব ইঁদুরকে ১৬ ঘণ্টা উপবাস ও ৮ ঘণ্টা খাবার গ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোর চুল ৯৬ দিনের মধ্যে আংশিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু অন্যদিকে, সারা দিন খাবারের সুযোগ পাওয়া ইঁদুরের চুল ৩০ দিনের মধ্যে পুরোপুরি বেড়ে উঠেছিল। এই প্রক্রিয়ায় দেখা যায়, ভিটামিন ই ব্যবহার করলে এই ক্ষতি কিছুটা কমিয়ে আনা সম্ভব, যা চুলের বৃদ্ধিকে পুনরায় উৎসাহিত করতে সাহায্য করে।
মানবদেহের ওপর এই গবেষণার প্রভাবও চমকে দেওয়ার মতো। একটি ছোট আকারের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা যায়, যারা প্রতিদিন ১৮ ঘণ্টা উপবাস পালন করেছিলেন, তারা চুলের বৃদ্ধির গতি ১৮% কমে গেছে।
ডায়েট কন্ট্রোলে সতর্কতা প্রয়োজন
গবেষণায় উঠে এসেছে যে, অন্তঃমিত উপবাসের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা রয়েছে, কিন্তু এটি কিছু অপ্রত্যাশিত প্রভাব নিয়ে আসতে পারে। চুলের বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এ ধরনের ডায়েট চুলের স্বাভাবিক গতি ও ঘনত্বকে প্রভাবিত করতে পারে। এ কারণে যারা এই ধরনের ডায়েট অনুসরণ করছেন, তারা যেন কিছু পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে চিন্তা করেন এবং উপবাসের পরবর্তী প্রভাবগুলো সম্পর্কে সচেতন হন।
বিং চ্যাং বলেন, ‘আমরা কাউকে এই ডায়েট থেকে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে গবেষণা করি না, বরং আমরা মানুষকে জানানোর চেষ্টা করছি যে, এটি সবার জন্য উপযোগী নাও হতে পারে এবং কিছু সময়ে অনাকাঙ্ক্ষিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।’