মা-বাবা। এই দুটি শব্দের অবদানে এ ধরায় আমাদের আগমন ঘটেছে আমাদের। এই দুটি শব্দের আদর, স্নেহ মায়া-মমতা আর ভালবাসার চাদর জরিয়ে শৈশব থেকে বেড়ে ওঠে প্রতিটি মানুষ।
ইসলাম পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ এবং তাদেরকে আনুগত্য ও সম্মান করার ব্যাপারে অনেক গুরুত্বারোপ করেছে। পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করা এবং তাদের সম্মান করার মাঝেই রয়েছে ইহকাল ও পরকালে সুখ, সমৃদ্ধি, সাফল্য এবং মহা প্রতিদান।
ইমাম মুসলিম রাহিমাহুল্লাহ আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাজিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর নবী! কোন আমল জান্নাতের বেশি নিকটবর্তী? তিনি বললেন, নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করা। পুনরায় তাকে জিজ্ঞেস করা হল আর কোন আমল? তিনি বললেন, পিতা-মাতাকে সম্মান করা।
অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং পিতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি। তিনি আরও বলেন, মহান আল্লাহর অধিক নিকটবর্তী হওয়ার ক্ষেত্রে মাকে সম্মান করার চেয়ে অন্য কোন আমল আছে কিনা, আমি জানি না। পাশাপাশি পিতা-মাতার সম্মান করা জীবনে বারাকাহ হাসিলের অন্যতম মাধ্যম।
হযরত আনাস ইবনে মালেক রাজিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি চায় যে তার আয়ু বৃদ্ধি পাবে এবং তার জীবিকা বৃদ্ধি পাবে, সে যেন তার পিতা-মাতার প্রতি সদয় হয় এবং আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখে।
পিতামাতার প্রতি সদয় হওয়া দুঃখ-কষ্ট বিপদ-আপদ দূর করার অন্যতম মাধ্যম। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাজিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, যে তিনজন ব্যক্তি একটি পাথরের কারণে একটি গুহায় আটকে গিয়েছিল এবং তাদের উত্তম আমলের কারণে তারা সেখান থেকে মুক্তি পেয়েছিল তাদের মধ্যে একজন ছিল পিতার প্রতি কর্তব্যপরায়ণ।
আরেক হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হতভাগা ঐ ব্যক্তি, যে তার পিতা-মাতাকে বৃদ্ধ অবস্থায় পেল অথচ তাদের খেদমত করে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না।
পিতা-মাতার সাথে সৎ ব্যবহার করা এবং তাদের সম্মান করার ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করো, তাঁর সাথে কোনকিছু শরিক করো না এবং পিতামাতার প্রতি ইহসান করো। (সূরা নিসা, ৩৬)
কুরআনের এই আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা স্বীয় হকের পরে পিতামাতার হকের কথা উল্লেখ করে স্পষ্টত তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন।
তাই পিতা-মাতার হকগুলো আমাদের যথাযথভাবে আদায় করতে হবে। সন্তানের উপর পিতা-মাতার অনেক হক রয়েছে। তার মধ্যে পিতা-মাতা জীবিত অবস্থায় তাদের হক সাতটি:
- সম্মান ও শ্রদ্ধা করা।
- ভালোবাসা।
- মান্য করা।
- সেবাযত্ন করা।
- সুখ–শান্তির ব্যবস্থা করা।
- প্রয়োজন পূরণ করা
- দূরে থাকলে দেখা–সাক্ষাৎ করা।
আর ইন্তেকালের পর তাদের হক সাতটি:
- তাঁদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনামূলক দোয়া করা ।
- ইবাদতের মাধ্যমে সর্বদা তাদের কবরে কিছু সওয়াব প্রেরণ করা।
- পিতা-মাতার বন্ধুবান্ধব ও নিকট স্বজনদের সম্মান করা, সাহায্য সহযোগিতা করা।
- তাঁদের ঋণ থাকলে পরিশোধ করা ও তাঁদের কাছে কারও গচ্ছিত আমানত থাকলে তা প্রত্যার্পণ করা।
- বৈধ অসিয়ত পূর্ণ করা।
- কবর জিয়ারত করা।
উল্লেখ্য, যেসব নেক কাজের দ্বারা আল্লাহ তায়ালার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমরা ইহকাল ও পরকালে সুখ, সমৃদ্ধি, মহা সাফল্য ও পুরস্কার লাভ করব এবং জান্নাতে প্রবেশ করব— পিতামাতার হক আদায় তার মধ্যে অন্যতম। তাই আসুন! পিতা-মাতার হক আদায়ের মাধ্যমে আমরা মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করি।