নিউজনেস্ট

রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে নিরাপত্তাহীনতার ক্রমবর্ধমান সংকট!

রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে নিরাপত্তাহীনতার ক্রমবর্ধমান সংকট।
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির। ছবি : আল জাজিরা

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে দীর্ঘদিন ধরে দারিদ্র্য ও কষ্ট নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো এই সম্প্রদায়কে গভীরভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে। নৃশংস হামলা, ভয়াবহ অপহরণ এবং সহিংসতায় শিবিরগুলোর হাজারো মানুষের নিরাপত্তার আশার আলো ক্রমেই ফিকে হয়ে যাচ্ছে।

গত ১৫ জানুয়ারি রাতে কুতুপালং শরণার্থী শিবির-৩ এর মসজিদে তওবা মাহফিলে ভাষণ দিচ্ছিলেন এক প্রবীণ উপদেশক। তবে হঠাৎ অস্ত্রধারীরা মসজিদে ঢুকে শতাধিক উপস্থিত মানুষের সামনে তাঁকে অপহরণ করে।

অপহরণকারীরা তাঁকে মুশোরায় নিয়ে যায়, সেখানে তাঁকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে। পাশাপাশি তারা তাঁর টাকা, মোবাইল ফোন এবং ঘড়ি ছিনিয়ে নেয়। মুক্তি দেওয়ার আগে তাঁর মুখে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। আহত অবস্থায় ফিরে আসা ওই প্রবীণের ঘটনায় শিবিরের মানুষ গভীর ক্ষোভে ফেটে পড়েছে।

একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘এটি শুধু একজন মানুষের ওপর হামলা নয়, এটি আমাদের নিরাপত্তা ও বিশ্বাসের ওপর আঘাত।’

৮ জানুয়ারি কুতুপালং থেকে সিএনজিতে যাত্রার সময় আরেক ব্যক্তিকে অপহরণ করা হয়। অপহরণকারীরা তাঁকে হ্নীলায় নিয়ে যায় এবং তাঁর মুক্তির জন্য ৫ লাখ টাকা দাবি করে।

পরিবারের সদস্যরা দিশেহারা হয়ে বহু অনুনয় করার পর মুক্তিপণের টাকা সংগ্রহ করেন। তবে এই ঘটনার পর তাঁর পরিবার ভয়ে আতঙ্কিত। অপহৃত ব্যক্তির একজন আত্মীয় জানান, আমরা এখন প্রতিনিয়ত ভয়ে থাকি। জরুরি প্রয়োজনে ভ্রমণ করতেও সাহস পাই না।

এদিকে ১৪ জানুয়ারি ছয় বছরের এক শিশু খাবার কিনতে যাওয়ার সময় অপহৃত হয়। পরে অপহরণকারীরা শিশুটির মাটিচাপা দেওয়ার ভয়াবহ ছবি ও ভিডিও পরিবারকে পাঠায়। ভিডিওতে শিশুটি কাঁদতে কাঁদতে বলে, “আহ বাবা! দয়া করে টাকা পাঠাও আর আমাকে বাঁচাও। তারা আমাকে মাটিতে পুঁতে ফেলছে।”

প্রথমে অপহরণকারীরা ৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করলেও পরে তা কমিয়ে ২ লাখ টাকায় নিয়ে আসে। কিন্তু চরম দারিদ্র্যের মধ্যে থাকা পরিবারটি এত টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে। পরিবারের সদস্যরা মসজিদে ভিক্ষা করে টাকা জোগাড়ের চেষ্টা করছেন।

এছাড়া শিবিরের ব্লক-৭৫-এ মমতাজ বেগম (৩৮) এবং তাঁর মেয়ে সুবাইদা বিবি (১৯)-এর মৃতদেহ একটি টয়লেট থেকে উদ্ধার করা হয়। তাদের মৃত্যুর কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। তবে এই ঘটনা শিবিরে নারীদের নিরাপত্তাহীনতাকে আরও স্পষ্ট করেছে।

অপহরণ, সহিংসতা এবং হামলার ক্রমবর্ধমান ঢেউ রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে হতাশার গভীরে ঠেলে দিচ্ছে। সম্প্রদায়ের নেতারা এসব অপরাধের মূল কারণ চিহ্নিত করে তা মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

সমস্যা সমাধানে যে সমস্ত কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী

নারী ও শিশুদের জন্য সহায়তা: নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র এবং সহায়তা ব্যবস্থা চালু করার প্রয়োজন।

দায়বদ্ধতা নিশ্চিতকরণ: অপরাধীদের শাস্তি দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

একজন শিবির নেতা বলেন, এটি শুধু হারিয়ে যাওয়া মানুষদের বিষয় নয়, এটি এখানে থাকা সবার জীবনের নিরাপত্তার প্রশ্ন। আমরা আর এই ভয়ে আর দিন কাটাতে পারি না।

আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রয়োজন

রোহিঙ্গা জনগণের ধৈর্য ও সংহতি এখনও অটুট। প্রতিবেশীরা একে অপরকে সাহায্য করছে, মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করা থেকে শুরু করে সকল প্রকার সাহায্যকরা সহ কারও ক্ষতিতে পাশে দাঁড়ানোয় তারা বদ্ধপরিকর ।

তবে এই সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহায়তা এবং কার্যকর নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখন সময়ের দাবি। শিশুর কান্না, মায়ের বিচার পাওয়ার আকুতি, এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রার্থনা শুধুই গল্প নয়। এগুলো মানবতার প্রতি আহ্বান।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত