দর্শন বরাবরই মানুষের চিন্তা-ভাবনা এবং সমাজের জটিল সমস্যাগুলোকে গভীরভাবে বিশ্লেষণের একটি মাধ্যম। আমরা সাধারণত মনে করি, দার্শনিকেরা রাজনৈতিক ও সামাজিক সংঘর্ষ নিয়ে সবচেয়ে নিরপেক্ষ ও যুক্তিপূর্ণ মতামত প্রদান করেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে বহু পশ্চিমা দার্শনিক সরাসরি ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। যেসব পশ্চিমা দার্শনিক ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে তারা নিম্নরূপ:
জর্ডান পিটারসন
ডানপন্থী আদর্শ ও বামপন্থার বিরোধিতায় সুপরিচিত কানাডার প্রখ্যাত দার্শনিক জর্ডান পিটারসন ৭ই অক্টোবরে ইসরায়েলে হামাসের ঐতিহাসিক হামলার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’ এ এক বিতর্কিত মন্তব্য করেন। যেখানে তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কাছে হামলাকারীদের সবাইকে ‘নরকে পাঠানোর’ আহ্বান জানান।
এছাড়া পিটারসন তার ইউটিউব চ্যানেলে নেতানিয়াহুকে আমন্ত্রণ জানিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি প্রচারের সুযোগ করে দেন।
স্লাভয় জিজেক
নিজেকে বামপন্থী বলে দাবি করা স্লোভেনিয়ার দার্শনিক স্লাভয় জিজেক ৭ই অক্টোবরের ঘটনার পর ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনকে ইসরায়েলের ডানপন্থী সরকারের আরেক রূপ হিসেবে উল্লেখ করেন। এছাড়া ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েল এত আগ্রাসন চালানোর পরও শান্তির জিজেক বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের ইসরায়েলিদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে হবে।’
ইয়ুর্গেন হাবারমাস
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের অন্যতম প্রভাবশালী চিন্তাবিদ ও দার্শনিক ইয়ুর্গেন হাবারমাস। ৭ই অক্টোবরের আল আকসা ফ্লাড অপারেশনের পর এই জার্মান দার্শনিক অন্যান্য জার্মান একাডেমিকদের সঙ্গে মিলে ইসরায়েলের পক্ষে একটি সংহতি বার্তায় স্বাক্ষর করেন।
হাবারমাস ৭ই অক্টোবরের হামলাটিকে ‘গণহত্যার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হত্যাযজ্ঞ’ হিসেবে অভিহিত করেন এবং এই হামলার ফলে গাজার ওপর ইসরায়েলের আক্রমণকে বৈধ হিসেবে তুলে ধরেন।
ডেভিড বেনাটার
‘ইট’স নট গুড টু হ্যাভ ইট ফ্রম বিয়িং’ (এটা থাকা থেকে না থাকা ভালো) বইয়ের মাধ্যমে তিনি প্রজননবিরোধী তত্বের জন্য পরিচিত। দক্ষিণ আফ্রিকার ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত দার্শনিক ডেভিড বেনাটার ইসরায়েলের দখলদার হওয়ার মতামতকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন। বেনাটার দাবি করেন, ইসরায়েলিদের ফিলিস্তিনের সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে এবং এ অঞ্চলে তাদের উপস্থিতি দখলদারিত্ব নয়।
সুজান নিয়েম্যান
নৈতিক দর্শন শাস্ত্রের মার্কিন দার্শনিক সুজান নিয়েম্যান। বর্তমানে তিনি জার্মানির পটসডামে অবস্থিত আইনস্টাইন ফোরামের পরিচালক। তিনি ইসরায়েলি দখলদারিত্বের সমালোচনা করতে অস্বীকৃতি জানান এবং দুই পক্ষের প্রতি সকলকে নিরপেক্ষ থাকার আহ্বান জানালেও ৭ই অক্টোবরের হামলাকে তিনি ‘ইহুদি জনগণের ওপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তবে অনেক পশ্চিমা দার্শনিক ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নিলেও, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফিলিস্তিনের পক্ষে রয়েছে বহু ব্যক্তি ও সংগঠন।
কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বের দার্শনিকদের ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান জন্ম দিয়েছে কিছু বিরাট প্রশ্নের। আসলেই কি দর্শন সত্য খোঁজার উপায়, নাকি এটি নির্ভর করে যার যেটা বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হয় তার ওপর? দর্শন কি আসলেই নিরপেক্ষ নাকি দর্শনও রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট?
সূত্র: আল জাজিরা