নিউজনেস্ট

মুহাম্মদ বাহার: এক নীরব বিদায়ের গল্প

মুহাম্মদ বাহার: এক নীরব বিদায়ের গল্প
২৪ বছর বয়সী মুহাম্মাদ বাহার ছিলেন প্রতিবন্ধী। কিন্তু দখলদার ইসরায়েলি সেনারা নৃশংস নির্যাতনে তাকেও হত্যা করে। ছবি: আল জাজিরা

মুহাম্মদ বাহার। ২৪ বছরের এক ফিলিস্তিনি তরুণ। বাহার ছোটবেলা থেকেই ডাউন সিম্পট্রমের কারণে প্রতিবন্ধী। বাহারের মা ছিলেন তার জীবনের একমাত্র ভরসা। খাওয়া থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই মাকে প্রয়োজন হত তার। মা যেমন তাকে পরম যত্নে রাখতেন, তেমনি ভালোবাসার স্পর্শে বেঁধে রাখতেন। বাহারের জীবন ছিল এক শান্ত নদীর মতো, যেখানে মায়ের কোলেই জীবনের সমস্ত আনন্দ আর কষ্ট মিলত বাহারের।

৩রা জুলাই। এক নির্মম দিন। এ দিন বাহারের পরিবারের জীবন চিরতরে বদলে যায়। গাজায় দীর্ঘদিনের টানা বোমা বর্ষণের পর দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী বাহারদের ঘরে হানা দিল। বাহারের পরিবারের সবাই তখন একটি ছোট ঘরে আশ্রয় নিলেও, পালাতে পারেনি বাহার। বাহারের শরীর তাকে সেই সুযোগ দেয়নি। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তাকে ঘরের হলরুমেই বন্দি করে রেখেছিল।

হঠাৎ দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে পড়ল দখলদার ইসরায়েলিরা। ঘরে ঢুকে বাহারকে সামনে পেয়ে ভীতু দখলদার সেনারা তাকে আক্রমণ করতে লাগল। বাহারের বুঝশক্তি এমনিতেই সীমাবদ্ধ ছিল, তাই নিজেকে রক্ষা করার মতো কোনো শক্তি সে পেল না। রক্তে ভেজা বাহার তার শান্ত কণ্ঠে শুধু বলল, ‘হয়েছে মা, হয়েছে।’ যেন এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে রক্তে ভেজা কাঁপা কণ্ঠে বাহার প্রার্থনা করছিল।

দূরে দাঁড়িয়ে বাহারের মা সব দেখছিলেন, অসহায় মর্মবেদনা তার প্রতিটি শ্বাসে বের হয়ে বাতাস ভারী করে তুলছিল। তিনি বারবার ছুটে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু দখলদার বাহিনীর সৈন্যরা তাকে আটকে রাখল। দখলদার সৈন্যরা জানাল, মুহাম্মদের জন্য এক বিশেষ ডাক্তার আসছে। বাহারের মা তখন তার জন্য একটু পানি চাইলো। কারণ, সে শুনতে পাচ্ছিল মুহাম্মদের দুর্বল কণ্ঠে বলা সেই আকুতি- ‘মা! একটু পানি দাও!’ কিন্তু সৈন্যরা তাকে জানাল, বাহার পানি খেয়েছে এবং এখন শান্তিতে আছে।

মুহূর্ত পর হলঘর থেকে মুহাম্মদের সেই কাঁপা কণ্ঠ নিরব হয়ে গেল। ইসরায়েলি সেনাদের একজন বাহারের মায়ের কাছে এসে জানাল, ‘বাহার আর নেই, সে মুক্তি পেয়েছে।’ সত্যিই মুহাম্মদ মুক্তি পেয়েছিল সেদিন। রাতের আকাশের নক্ষত্র হয়ে সে মিলিত হয়েছিল তার শহিদ বাবার সাথে। যেখানে নেই কোনো যন্ত্রণা। নেই কোনো যুদ্ধ।

সূত্র: আল জাজিরা

শাহাদাত হুসাইন
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত