নিউজনেস্ট

অনি: মৃত্যুপুরী গাজার ক্ষুদে প্রকৌশলী

অনি: মৃত্যুপুরী গাজার ক্ষুদে প্রকৌশলী
ইসরায়েলি সহিংসতায় শহিদ শিশু অনি আলদাউস। ছবি: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম

অনি। বয়স মাত্র ১৩ বছর। বিশ্বের উন্মুক্ত কারাগার গাজার বাসিন্দা সে। অনির স্বপ্ন, একদিন সে সফল ইউটিউবার হবে। তার চ্যানেলে এক মিলিয়ন অথবা ১০ মিলিয়ন কিংবা তার চেয়েও বেশি সাবস্ক্রাইবার থাকবে। অনি সবসময়ই তার এই স্বপ্নে বিভোর থাকত। যেন তার প্রতিটি কাজ, প্রতিটি মুহূর্ত স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়ে যাওয়ার একেকটি ধাপ।

তার এই অদম্য আগ্রহের জন্য সবাই তাকে আদর করে ‘ক্ষুদে প্রকৌশলী’ বলে ডাকত। কম্পিউটার, ইন্টারনেট আর ভিডিও গেমের প্রতি অনির ছিল ভীষণ ভালোবাসা। শুধু তাই নয়, বিজ্ঞানেও ছিল অনির অসীম কৌতূহল। স্কুলের সবাই বিশ্বাস করত, অনি ভবিষ্যতে অনেক বড় কিছু করবে। শিক্ষকগণ তাকে নিয়ে গর্ব করতেন। বন্ধুরা তাকে নিয়ে মেতে উঠত আনন্দে। এক কথায় তার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের গল্প ঘুরে ফিরত সবার মুখে মুখে।

কিন্তু জীবন বড়ই নিষ্ঠুর। কখনো এক নিমিষে মুছে যায় সব ধরণের আশা স্বপ্ন। হামাসের ঐতিহাসিক আল আকসা ফ্লাড অভিযানের পরের সপ্তাহেই, দখলদার ইসরায়েলের আক্রমণে গাজার আকাশের নিচে থাকা অনিদের বাড়ি পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে। দখলদার ইসরায়েলের ছোঁড়া মিসাইলের আঘাতে সেই ধ্বংসস্তূপের নিচেই হারিয়ে যায় ‘ক্ষুদে প্রকৌশলী’। গাজার শহিদ শিশুদের মিছিলে যোগ দেয় অনি।

আরও পড়ুন গাজার গল্প: খুনি হাসপাতাল

‘মরণোত্তর খ্যাতি’ বলে অদ্ভুত এক রীতি আছে এই জগতে। নিষ্ঠুর জগত ছেড়ে অনি চলে গেলেও এই জগত বাঁচিয়ে রাখল তাকে। মৃত্যুর পরেই জীবন্ত হয়ে উঠল অনি। তার তৈরি ভিডিওগুলো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল সামাজিক মাধ্যমে। অনেক পরিচিত মুখ, জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বরা শেয়ার করল তার ভিডিও। জীবনের বিনিময়ে অনি পেয়েছিল সেই স্বীকৃতি, যে স্বীকৃতির জন্য সে দিনরাত স্বপ্ন দেখত।

হয়তো আজ আকাশের ওপারে থেকে ছোট্ট অনি মিটিমিটি হাসছে। তার চ্যানেল এখন বহু মানুষের প্রিয়, তার স্বপ্নের মতো বড় হয়ে উঠেছে। মরণোত্তর অনি পেয়েছে তার কাঙ্ক্ষিত খ্যাতি। কিন্তু অনি তো এখন এসব নশ্বর সুখের মায়াজাল ছিন্ন করে অবিনশ্বর মায়াবনে বেঁধেছে ঘর। অনি এখন স্বর্গের মায়াবনে মনের আনন্দে উড়ে বেড়ানো শ্যামল ময়না পাখি।

শাহাদাত হুসাইন
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত