নিউজনেস্ট

তারিক বিন জিয়াদ: ইসলামি ইতিহাসের এক গৌরবময় সেনানায়ক

তারিক বিন জিয়াদ: ইসলামি ইতিহাসের এক গৌরবময় সেনানায়ক
তারিক বিন জিয়াদ: ইসলামি ইতিহাসের এক গৌরবময় সেনানায়ক। ছবি: এআই

তারিক বিন জিয়াদ ইসলামের বিজয়ের ইতিহাসে এক কিংবদন্তি নাম। ৫০ হিজরিতে জন্ম নেওয়া এই বীর যোদ্ধা ইসলাম গ্রহণ করেন মুসা বিন নুসাইরের হাতে। মুসার বিশ্বস্ত সেনাপতি ও শাসক হিসেবে তারিক অল্প সময়েই খ্যাতি অর্জন করেন। তাঞ্জা বিজয়ের পর ৮৯ হিজরিতে তিনি শহরটির গভর্নরের দায়িত্ব পান। তারিক ছিলেন উমাইয়া খেলাফতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সামরিক নেতা। তাঁর সাহস, বীরত্ব ও নেতৃত্বগুণ ইতিহাসে উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে আছে। ঐতিহাসিকদের বর্ণনায়, তিনি ছিলেন সুদর্শন, দীর্ঘকায় ও বলিষ্ঠ। তিনি ১০২ হিজরিতে মৃত্যু বরণ করেন।

সামরিক জীবন ও জিহাদ

তারিক বিন জিয়াদ, মুসা বিন নুসাইরের সঙ্গে জিহাদে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধক্ষেত্রে তাঁর অসাধারণ নেতৃত্ব ও কৌশলগত দক্ষতায় মুসা মুগ্ধ হয়ে তাঁকে মরক্কো অঞ্চলের সেনাবাহিনীর অগ্রভাগের নেতৃত্বের দায়িত্ব দেন। তাঁর নেতৃত্বে একসময়ে মুসলিম বাহিনী আটলান্টিক মহাসাগর পর্যন্ত পৌঁছে পুরো মরক্কোকে ইসলামি শাসনের আওতায় আনে। ‘তাঞ্জা’ বিজয়ের পর ‘সেবতার’ মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরের ওপর নজর রাখতে তারিককে তাঞ্জার গভর্নর করা হয়।

আন্দালুস বিজয়ের কীর্তি

৯২ হিজরিতে মুসা বিন নুসাইরের নির্দেশে তারিক আন্দালুস অভিযানে রওনা হন। তিনি প্রথমে ‘জাবাল তারিক’ (বর্তমান জিব্রালটার নামে পরিচিত) অতিক্রম করে করতাজেনা দুর্গ দখল করেন এবং আশপাশের অঞ্চলগুলো ইসলামি শাসনের অধীনে আনেন। গথ রাজ্যের শাসক রডরিক তার বিরুদ্ধে বারবার সৈন্য পাঠালেও, তারিকের বীরত্ব ও কৌশলের কাছে প্রতিবারই পরাজিত হন।

রমজান মাসে হওয়া ঐতিহাসিক ‘ওয়াদি লাক্কা’ যুদ্ধের মাধ্যমে মুসলিম বাহিনী গথ রাজ্যের ওপর বিজয় অর্জন করেন। রডরিক এই যুদ্ধে পরাজিত হন, যা গথ শাসনের সমাপ্তি ঘটায়। এরপর তারিক টলেডো, গ্রানাডা ও মালাগার মতো শহর দখল করে পুরো আন্দালুসকে ইসলামি শাসনের আওতায় আনেন।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ‘পেছনে সমুদ্র, সামনে শত্রু’ এই বিখ্যাত উক্তি তারিক বিন জিয়াদের নামে প্রচলিত হলেও, ঐতিহাসিকগণ এটিকে ইউরোপীয় লেখকদের বানানো বলে মনে করেন। একইভাবে তারিকের নৌযান পুড়িয়ে ফেলার গল্পকেও ভিত্তিহীন বলা হয়েছে। কারণ, ঐ নৌযান মুসলিমদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি ছিল না।

তারিকের মানবিক গুণাবলি

তারিক বিন জিয়াদের মানবতার কিছু উল্লেখযোগ্য দিক:

  • তিনি নিজের নেতৃত্ব নিয়ে কখনো অহংকার করেননি এবং মুসা বিন নুসাইরের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য দেখিয়েছেন।
  • আন্দালুস বিজয়ের সময় তিনি গথ শাসনের অত্যাচার থেকে ইহুদিদের থেকে মুক্তি দেন, যাদের ওপর গথ শাসকরা নানা নির্যাতন চালাত।
  • বিজিত এলাকার অধিবাসীদের সঙ্গে দেওয়া চুক্তি তিনি কখনো ভঙ্গ করেননি এবং ন্যায়পরায়ণ শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।

শেষ জীবন

১০২ হিজরিতে তারিক বিন জিয়াদের মৃত্যু হয়। তবে তাঁর শেষ জীবন নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। কেউ বলেন, তিনি তাঁর শেষ জীবনে দামেশকে নিভৃতে ইবাদাতে মগ্ন হন। আবার কেউ বলেন, মুসা বিন নুসাইরের সাথে সম্পদের বিরোধের কারণে তিনি বন্দি ছিলেন।

তারিক বিন জিয়াদ ইসলামের ইতিহাসে এক গৌরবময় সেনানায়ক। যিনি তাঁর বীরত্ব, নৈতিকতা ও নেতৃত্বগুণে ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে আছেন।

মহীরূহ ডেস্ক
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত