ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের দীর্ঘ সংঘাতে এপর্যন্ত বহুবার টার্গেটেড কিলিং পরিচালনা করেছে ইসরায়েল। বলা বাহুল্য, সেইসব হত্যাকাণ্ডে ইসরায়েলের লক্ষ্য ছিল ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা এবং প্রতিরোধ আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করা হামাসের নেতারা। ইসরায়েল এই হত্যাকাণ্ডগুলোর পিছনে বারবার নিজেদের নিরাপত্তার অজুহাত দেখালেও, এসব হত্যাকাণ্ড ফিলিস্তিনিদের সময়ে সময়ে করেছে ঐক্যবদ্ধ। নতুনভাবে মনে জ্বেলেছে স্বাধীনতা সংগ্রামের মশাল।
ইয়াহইয়া আয়াশ
১৯৯৬ সালের ৫ই জানুয়ারি। হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জুদ্দিন আল কাসসামের অন্যতম নেতা ইয়াহইয়া আয়াশ এদিন গাজায় একটি মোবাইল ফোন বিস্ফোরণে শহিদ হন। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেটকে এই হত্যার জন্য দায়ী করা হয়। উল্লেখ্য, বোমা তৈরির বিশেষ দক্ষতার জন্য হামাসের অভ্যন্তরে ইহাইয়া আয়াশ ‘মুহান্দিস বা প্রকৌশলী’ নামে পরিচিত ছিলেন।
জামাল সেলিম ও জামাল মানসুর
২০০১ সালের ৩১শে জুলাই। আমেরিকার সবরাহকৃত অ্যাপাচি হেলিকপ্টার থেকে হামলা চালিয়ে নাবলুসে হামাসের শীর্ষ নেতা জামাল সেলিম ও জামাল মানসুরকে শহিদ করে ইসরায়েল। হামাসের রাজনৈতিক এবং গণমাধ্যম কার্যক্রমের সাথে যুক্ত ছিলেন জামাল সেলিম ও জামাল মনসুর । এছাড়াও ফাতাহ ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি সংঠনের সঙ্গে আলোচনায় তার দুজন হামাসের প্রতিনিধি ছিলেন।
সালাহ শাহাদাহ
২০০২ সালের ২২ জুলাই ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিজ স্ত্রী-কন্যাসহ শহিদ হন হামাসের সামরিক শাখার প্রতিষ্ঠাতা সালাহ শাহাদাহ । সেই সাথে শহিদ হন আরও ১৫ জন বেসামরিক ব্যক্তি।
ইসমাইল আবু শানাব
হামাসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা ছিলেন ইসমাইল আবু শানাব। আবু শানাব ২০০৩ সালের ২২ আগস্ট ইসরায়েলি রকেট হামলায় নিহত হন।
শায়খ আহমদ ইয়াসিন
২০০৪ সালের ২২ মার্চ। ফজরের নামাজের পর গাজায় মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় ইসরায়েলি হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রে শহিদ হন হামাসের প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আহমদ ইয়াসিন। হসায়খ আহমাদ ইয়াসিন ছিলেন ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের অন্যতম প্রতীক।
আব্দুল আজিজ রান্তিসি ও শায়খ খলিল
শায়খ আহমদ ইয়াসিনের মৃত্যুর কয়েক সপ্তাহ পর পরই, তার উত্তরসূরি আব্দুল আজিজ রান্তিসি ২০০৪ সালের এপ্রিলে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত হন। একই বছরের সেপ্টেম্বরে, গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে হামাসের আরেক বড় নেতা শায়খ খলিল শহিদ হন।
নিজার রিয়ান ও সাঈদ সিয়াম
সাল ২০০৯। সেই বছর জানুয়ারিতে ইসরায়েলের বিমান হামলায় হামাসের দুই শীর্ষ নেতা নিজার রিয়ান ও সাঈদ সিয়াম নিহত হন। উল্লেখ্য, তারা উভয়েই হামাসের রাজনৈতিক ও সামরিক কার্যক্রমে অত্যন্ত সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
মাহমুদ আল মাবুহ
হামাসের সামরিক শাখার অন্যতম নেতা ছিলেন মাহমুদ আল-মাবুহ। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে দুবাইয়ের একটি হোটেল কক্ষে রহস্যজনকভাবে নিহত হন মাহমুদ আল-মাবুহ। এই হত্যার জন্য ইসরায়েলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের এজেন্টদের দায়ী করা হয়। মোসাদ ভুয়া পাসপোর্ট ব্যবহার করে অপারেশনটি পরিচালনা করেছিল।
আহমেদ আল-জাবারি
২০১২ সালের ১৪ নভেম্বর। এই বছর ইসরায়েল ‘পিলার অফ ডিফেন্স’ নামে এক বিশেষ অপারেশনে হামাসের সামরিক শাখার ডেপুটি কমান্ডার আহমেদ আল-জাবারিকে হত্যা করে। হামলায় জাবারির গাড়িতে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলে শহিদ হন তিনি।
সালেহ আল আরুরি
২০২৪ সালের ২ জানুয়ারি ইসরায়েলের ড্রোন হামলায় নিহত হন হামাসের উপ-রাজনৈতিক প্রধান সালেহ আল-আরুরি। তিনিও হামাসের সামরিক শাখা কাসসাম ব্রিগেডের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন।
ইসমাইল হানিয়া
২০২৪ সালের ৩১ জুলাই। ইসরায়েলি হামলায় তেহরানে শহীদ হন হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়া। হামাস হানিয়ার শাহাদাতের খবর নিশ্চিত করে এবং এর জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে কঠিন প্রতিশোধের হুমকি দেয়।
মোহাম্মদ আদ-দাইফ
ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার দিনেই এক বিমান হামলায় হামাসের সামরিক শাখার প্রধান মোহাম্মদ আদ-দাইফেরও নিহত হওয়ার দাবি করেছিল ইসরায়েল। তবে এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে মুহাম্মাদ আদ-দাইফের জীবিত থাকার কথা জানায় হামাস।
হুসাইন মাহমুদ নাদের
২০২৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর, লেবাননে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হামাসের সামরিক শাখার ফিল্ড কমান্ডার হুসাইন মাহমুদ নাদের নিহত হন।
ইয়াহইয়া সিনওয়ার
২০২৪ সালের ১৭ই অক্টোবর ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধরত অবস্থায় বীর দর্পে শহীদ হন হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার।
উল্লেখ্য, হামাসের এত এত নেতাকে হত্যার পেছনে ইসরায়েলের উদ্দেশ্য ছিল হামাসের নেতৃত্বকে দুর্বল করে প্রতিরোধ আন্দোলনকে দমিয়ে রাখা। কিন্তু অতীত যেমনটি বলে, এভাবে কোনদিনই বন্ধ হয়নি প্রতিরোধ। প্রতিবারই নতুন নেতার আগমনে প্রতিরোধ আন্দোলন ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীনতা অর্জনের লড়াইয়ে যোগ করেছে নতুন উদ্দীপনা।
সূত্র: আল জাজিরা, নিউজনেস্ট
আতাউল্লাহ আয়মান
- আতাউল্লাহ আয়মান#molongui-disabled-link
- আতাউল্লাহ আয়মান#molongui-disabled-link
- আতাউল্লাহ আয়মান#molongui-disabled-link
- আতাউল্লাহ আয়মান#molongui-disabled-link