২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে আয়োজিত হতে যাচ্ছে এক ব্যতিক্রমী ড্রোন শো। ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের আইকনিক ইমেজগুলো থ্রিডি আকারে ফুটিয়ে তুলতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এই উদ্যোগ নিয়েছে। ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’-এর অংশ হিসেবে ২,৫০০ ড্রোনের মাধ্যমে এই আয়োজন করা হবে। তবে এই আয়োজনকে ঘিরে শুরু হয়েছে সমালোচনা।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই আয়োজনের জন্য চীন থেকে ৫ লাখ ডলারের সমমূল্যের ড্রোন আনা হবে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬ কোটি ১০ লাখ টাকা। এর পাশাপাশি চীন থেকে আসা কারিগরি বিশেষজ্ঞদের থাকা-খাওয়া ও পরিবহন খরচও বহন করবে বাংলাদেশ সরকার। এ শো-এর মাধ্যমে অভ্যুত্থানের আইকনিক ইমেজগুলো থ্রিডি আকারে তুলে ধরা হবে, যেখানে ড্রোনের পাশাপাশি আলো ও সঙ্গীতও ব্যবহার করা হবে।
চীন এবং বাংলাদেশের ৫০ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্ক উদ্যাপনের অংশ হিসেবে চীন এই উদ্যোগে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে পুরো ব্যয় এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। এজন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
যে অভ্যুত্থানের স্মৃতি ধরে রাখতে এই আয়োজন, সেই অভ্যুত্থানে অনেকে নিহত ও আহত হয়েছেন। অনেকে এখনও শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছেন। তাদের অনেক পরিবার এখনো অর্থনৈতিক সংকটে দিন কাটাচ্ছে। সমালোচকরা বলছেন, ড্রোন শো-এর পেছনে কোটি কোটি টাকা খরচ না করে আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য এই অর্থ বরাদ্দ করা উচিত।
একটি মহল মনে করছে, এই উদ্যোগ মুজিব বর্ষের মতো এক বিলাসবহুল আয়োজনের পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, আইকনিক ইমেজ ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমে কি অভ্যুত্থানের প্রকৃত শিকারদের প্রতি ন্যূনতম দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হবে?
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. মুখলেসুর রহমান আকন্দ জানিয়েছেন, জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় এই আয়োজনের অনুমোদন চেয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ১৬ জানুয়ারি চীনের একটি প্রতিনিধি দল ভেন্যু পরিদর্শন করবে। এরপরই আয়োজনের চূড়ান্ত পরিকল্পনা প্রকাশ করা হবে।
অন্যদিকে উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘এ বিষয়ে মন্তব্য করার মতো কিছু হয়নি।’
জুলাই অভ্যুত্থান থেকে আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো এখনও দেশের জন্য একটি অমীমাংসিত দায়িত্ব। যারা দেশের জন্য লড়াই করেছেন, তাদের যথাযথ চিকিৎসা ও আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করা আজকের বাস্তবতায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
একদিকে দেশের জনগণের ট্যাক্সের অর্থে ব্যয়বহুল আয়োজন, অন্যদিকে অসহায় আহত যোদ্ধাদের দুর্দশা—এই বাস্তবতা যেন সরকারের নীতিগত অগ্রাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
ড্রোন শো আয়োজন নিঃসন্দেহে প্রযুক্তি ও সংস্কৃতির মেলবন্ধনের একটি নজির হতে পারে। তবে এই আয়োজনের সময় ও প্রয়োগ যথার্থ কিনা, তা ভেবে দেখা জরুরি। জনগণ আশা করে, সরকার এই ধরনের আয়োজনের পাশাপাশি দেশের আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসন ও সুস্থতার দিকেও যথেষ্ট গুরুত্ব দেবে।